প্রয়োজন সব সময় উদ্ভাবনের ক্ষেত্র তৈরি করে না। দুর্ঘটনাক্রমেও অনেক বিশাল আবিষ্কার হয়েছে। আমাদের রোগের চিকিৎসা, তৃপ্তির খাবার এবং প্রতিদিনকে আনন্দময় করতে বিজ্ঞান যেসব জিনিস দিয়েছে তার সবকিছুই কিন্তু খুব ভেবে-চিন্তে বের করা হয়নি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস রয়েছে যা হঠাৎ করেই আবিষ্কৃত হয়ে গেছে।

এখানে দেখুন এমনই ১৩টি আবিষ্কার যা হঠাৎ করে আমরা পেয়ে গেছি এবং যেগুলো বদলে দিয়েছে পৃথিবী।
১. পেনিসিলিন : স্যার আলক্সান্ডার ফ্লেমিং এই বিস্ময়কর ওষুধ হঠাৎ করেই তৈরি করেন। এ বিষয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বিরক্ত হয়ে তিনি তা ছুড়ে ফেলে দেন এবং তখনই যা চাচ্ছিলেন তা পেয়ে যান। ১৯২৮ সালের একদিন ফ্লেমিং দেখেন যে, তার পেট্রি ডিসে যে পদার্থ তৈরি হয়েছে তা সব ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলছে। সেখান থেকেই তৈরি হয় বিস্ময়কর অ্যান্টিবায়োটিক পেনিসিলিন। ১৯০০ সাল থেকে সংক্রমণের কারণে মানুষ যেভাবে মারা যেতো, পেনিসিলিন আবিষ্কারের পর মৃত্যুর হার বিশ ভাগের এক ভাগ কমে গেছে।

২. কোকা-কোলা : ফার্মাসিস্ট জন পেমবার্টন এই জনপ্রিয় পানীয়টি আবিষ্কার করেন। ১৮৮০ এর দশকে আটলান্টায় বসবাসের সময় পেমবার্টন মদ ও কোকো দিয়ে তৈরি এক ধরনের সিরাপ বিক্রি করতেন যার নাম ছিলো 'পেমবার্টনস ফ্রেঞ্চ ওয়াইন কোকা'। দুর্বলতা এবং মাথাব্যথা নিরাময়ের কাজে এ সিরাপ ব্যবহার করা হতো। ১৮৮৫ সালে আটলান্টায় মদ বিক্রি নিষিদ্ধ হলে পেমবার্টন খাঁটি কোকা দিয়ে কার্বনেটেড পানীয় হিসেবে সিরাপটি বানান যা আজকের কোকা-কোলা।

৩. চকোলেট চিপ কুকি : টল হাউজ ইন এর মালিক রুথ ওয়েকফিল্ড চকোলেট কুকি বানাতে গিয়ে আজকের জনপ্রিয় চকোলেট চিপ কুকি বানিয়ে ফেলেন। ১৯৩০ এর দিকে বেকারস চকোলেটে কাজ করার সময় এই নারী কুকির কাঁচা অংশে চকোলেট ছোট ছোট করে কেটে দিয়ে দেন।

৪. আলুর চিপস : নিউ ইয়র্কের ক্যারি মুন লেক হাউজের শেফ জর্জ ক্রাম ১৮৫৩ সালের একদিন এক ক্রেতার জন্য ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বানাচ্ছিলেন। দেওয়ার পর ওয়েটার তা ফিরিয়ে নিয়ে আসেন এবং শেফকে বলেন তা আরো পাতলা এবং মচমচে করে দিতে। শেফ রেগে গিয়ে একেবারে পাতলা করে আলু কাটেন এবং তা খটখটে না হওয়া পর্যন্ত ভাজতে থাকেন। তৈরি হয় আজকের পটেটো চিপস।

৫. পেসমেকার : ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার জন হুপস হাইপোথারমিয়া নিয়ে গবেষণা করছিলেন এবং রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি দিয়ে দেহের তাপমাত্রা ফেরাতে কাজ শুরু করেন। তিনি বুঝতে পারেন, যদি ঠাণ্ডায় হৃদযন্ত্র কাজ বন্ধ করে দেয় তবে একে কৃত্রিমভাবে চালু করা যাবে। এই উপলব্ধি থেকেই ১৯৫১ সালে তৈরি হয় পেসমেকার।

৬. সিলি পুটি : জেনারেল ইলেকট্রিকে কর্মরত প্রকৌশলী জেমস রাইট এটি আবিষ্কার করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্লেনের টায়ার, গ্লাভস ইত্যাদির জন্য রাবারের প্রয়োজন হয়। এর বিকল্প হিসেবে জেমস সিলিকন থেকে কিছু একটা বানানো চেষ্টায় ছিলেন। ১৯৪৩ এর দিকে হঠাৎ একদিন তিনি সিলিকন ওয়েলে বরিক এসিড দিলেন। এতে আঠালো এবং বাউন্স করে এমন এক ধরনের পদার্থ তৈরি হয়। এর বাস্তবিক ব্যবহার তিনি তৎক্ষণাত বুঝতে না পারলেও খুব শিগগিরই সিলি পুটি দারুণ কাজের বস্তুতে পরিণত হয়।

৭. মাইক্রোওয়েভ ওভেন : ১৯৪৬ সালের দিকে রেথিওন করপোরেশনের ইঞ্জিনিয়ার পারসি স্পেন্সার বায়ুশুন্য টিউবের মধ্যে রাডার সংক্রান্ত একটি পরীক্ষা করছিলেন। এটি করার সময় তার পকেটে থাকা একটি ক্যান্ডি গলতে শুরু করে এবং তিনি তা খেয়াল করেন। তিনি দ্রুত কিছু কর্ন সেখানে দিলেন। মুহূর্তেই হয়ে গেলো পপকর্ন। তৈরি হলো আজকের অতি প্রয়োজনীয় মাইক্রোওয়েভ ওভেন।

৮. ওষুধ হিসেবে এলএসডি : ১৯৩৮ সালে সুইজারল্যান্ডের একটি ল্যাবরোটরিতে রসায়নবিদ অ্যালবার্ট হফম্যান লিজারসিক এসিড নিয়ে কাজ করছিলেন। এর যাবতীয় বিষয় নিয়ে গবেষণাকালে তিনি অসচেতনভাবে সামান্য অংশ গিলে ফেলেন। এর মাধ্যমে বের হয়ে আসে মানুষকে অকল্পনীয় কাল্পনিক জগতে নেওয়ার একটি ওষুধ এলএসডি। খোদ স্টিভ জবস বলেছেন, জীবনে অতি গুরুত্বপূর্ণ যে দুই-তিনটি কাজ করা হয়েছে তার মধ্যে একটি হলো, এলএসডি নেওয়া।

৯. স্যাকারিন : জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক কনস্টেনটাইন ফালবার্গ ১৮৭৯ সালে কয়লার নতুন ব্যবহার নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। কোনো এক পর্যায়ের পরীক্ষার পর কয়লার গাদ লেগেছিল তার হাতে। গবেষণার ফাঁকে বিস্কটি খেতে গিয়ে খেয়াল করলেন, তা আগের চেয়ে অনেক বেশি মিষ্টি লাগছে। পেয়ে গেলেন স্যাকারিন।

১০. পোস্ট-ইট নোট : ১৯৬৮ সালের কথা। থ্রিএম ল্যাবরোটরিতে কাজ করতেন স্পেন্সার এবং আর্ট ফ্রাই। স্পেন্সার তার বানানো হালকা আঠার কোনো ব্যবহার খুঁজে পাচ্ছিলেন না। এই আঠার বৈশিষ্ট্য ছিলো তা হালকা কিছুকে বোর্ডে বা দেয়ালে লাগিয়ে রাখতে পারতো। আবার তুলে ফেললে দুটো স্তরের কোনোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হতো না। একদিন তার বন্ধু বইয়ে ছোট ছোট নোট লিখা কাগজ লাগানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সমাধান না পেয়ে মেজাজ খারাপ তার। এ বিষয় নিয়ে দুই বন্ধুর কথোপকথনের সময় বের হয়ে আসে পোস্ট-ইট নোটস এর ধারণা।

১১. স্কচগার্ড : থ্রিএম এর কেমিস্ট প্যাস্টি শেরম্যান ১৯৫৩ সালে এয়ারক্র্যাফটের জ্বালানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এমন একটি রাবার বানানোর কাজ করছিলেন। একটি তরলের মিশ্রণ নিয়ে কাজ করার সময় হঠাৎ সেখান থেকে একটি ফোঁটা তার জুতোয় পড়ে। শেরম্যান খেয়াল করেন, তার জুতো ময়লা থাকলেও ফোঁটা যেখানে পড়েছিল সে স্থানটি চকচক করছে। এটি নিয়ে তিনি কাজ শুরু করেন যা আজকের স্কচগার্ড।

১২. কর্ন ফ্লেকস : জন এবং উইল কেলগ শস্যকণা থেকে গ্র্যানোলা বানানোর চেষ্টা করছিলেন। ১৮৯৮ সালের ঘটনা, তারা বিভিন্ন শস্যকণা জাল দিতে গিয়ে তা ভুলে কয়েকদিন একটি স্টোভে রেখে দেন। এতে শস্য জাল হয় এবং শুকনো ও পাতলা হয়ে যায়। এতে কয়েকটি বৈজ্ঞানিক কারিগরি ফলানোর পর ভেজা ভাব চলে যায় এবং আজকের কর্ন ফ্লেকস তৈরি হয়।

১৩. স্লিংকি : ১৯৪৩ সালে রিচার্ড জোনস এমন একটি মিটার ডিজাইন করতে চেয়েছিলেন যা যুদ্ধের জাহাজের শক্তি পর্যবেক্ষণ করবে। টানটান একটি স্প্রিং নিয়ে কাজ করার সময় হঠাৎ একটি স্প্রিং নিচে পড়ে এক জায়গায় অবস্থান করে এপাশ-ওপাশ করতে থাকে। ব্যাস, জন্ম হলো আজকের স্লিংকির।
No comments:
Post a Comment